দীর্ঘক্ষণ একই কাজ করার ফলে সেই কাজের প্রতি মানুষের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন দেখা দেয়। এ পরিবর্তনের ফলে ব্যক্তির কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। মানসিক ও শারীরিক অবস্থার এ পরিবর্তনকেই ক্লান্তি বা অবসাদ বলা হয়। তাই অবসাদ বলতে কর্মশক্তির শিথিলতা বা কর্মশক্তির হ্রাস পাওয়াকে বোঝায়। কর্মক্ষমতা হ্রাসই হলো অবসাদের সর্বজনীন কারণ। মনোবিদগণ অবসাদের বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন। কেউ বলেছেন- ‘কর্মক্ষমতা হ্রাসই হলো অবসাদ'। কারোর মতে— ‘কাজ করার জন্য কর্মক্ষমতার হ্রাসই হলো অবসাদ, তবে বিশ্লেষণধর্মী সংজ্ঞা হলো— “এক নাগাড়ে কোনো কাজ করার দরুন শরীরে কর্মক্ষমতার যে অবনতি হয় তাকে অবসাদ বলা যেতে পারে'।
অবসাদের শ্রেণিবিভাগ : মনোবিদগণ অবসাদকে দুই শ্রেণিতে ভাগ করেছেন – (ক) দৈহিক অবসাদ ও (খ) মানসিক অবসাদ।
ক. দৈহিক অবসাদ : খুব বেশি সময় ধরে দৈহিক পরিশ্রম করলে যে অবসাদ আসে তাকে দৈহিক অবসাদ বলে। এ অবসাদ দৈহিক পেশিঘটিত ও ইন্দ্রিয়গত। প্রত্যেক ব্যক্তির দৈহিক শ্রমের একটি সীমা আছে, এ সীমা অতিক্রম করলে অবসাদ দেখা দেয়। সাধারণ অবস্থায় কাজের সময় যে সব শারীরিক চাহিদা অনুভূত হয় তা দেহ নিজেই পূরণ করে নেয়। যেমন- দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়ার ফলে অতিরিক্ত অক্সিজেনের চাহিদা মেটানো যায়। আবার রক্তের চাপ ও হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেলে অতিরিক্ত শর্করা নিঃসৃত হয়। তবে কাজটি বেশি শ্রমসাধ্য হলে, ব্যক্তির সহনশীলতা কম হলে, অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরমে ব্যক্তির শারীরিক ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে অবসাদ দেখা দেয়।
খ. মানসিক অবসাদ : মানসিক কাজ অনেকক্ষণ ধরে করতে থাকলে মানসিক কর্মক্ষমতা হ্রাস পায় এবং অবসাদ দেখা দেয়। যেমন- অনেক সময় ধরে এক নাগাড়ে অংক করতে থাকলে একটা পর্যায়ে অংক করার জন্য বিচারশক্তি, চিন্তাশক্তি ও নির্ভুল করার ক্ষমতা কমতে থাকে। এই কমতে থাকা অর্থাৎ পরিবর্তনের এই অবস্থাকে মানসিক অবসাদ বলে। এছাড়া ব্যক্তিগত পছন্দ, অপছন্দ, মানসিক অবস্থার তারতম্য, পরিবেশগত কারণেও অবসাদ আসতে পারে। তবে দৈহিক ও মানসিক কাজকে যেমন সম্পূর্ণভাবে পৃথক করা যায় না, তেমনি দৈহিক অবসাদ ও মানসিক অবসাদকে আলাদা করা যায় না। অনেকক্ষণ দৈহিক পরিশ্রম করলে মানসিক অবসাদ আসতে পারে, তেমনি একটানা মানসিক কাজ করতে থাকলে দৈহিক অবসাদ আসে।
শিক্ষার্থীর উপর মানসিক অবসাদের প্রভাব : শিক্ষার্থী বলতে এখানে শারীরিক শিক্ষা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের বোঝানো হয়েছে। শারীরিক শিক্ষা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের যে দৈহিক অবসাদ আসে তা তাদের শারীরিক পরিশ্রমের পরিমাণের উপর নির্ভর করে। তাদের শারীরিক পরিশ্রমের ফলে বিপুল পরিমাণ ঘাম নিঃসরণ, শারীরিক অঙ্গ-সঞ্চালন এবং একাগ্রতার উপর প্রভাব ফেলে। কিন্তু যখন তারা মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখন যে সব প্রভাব প্রত্যক্ষ করা যায় তা নিম্নরূপ-
১। তাদের কর্মসূচি পালনকালে ভুল হতে থাকে।
২। তারা নিজেদের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে।
৩। তাদের কাজের মধ্যে সমন্বয় থাকে না।
৪। তারা কাজের ছন্দ হারিয়ে ফেলে এবং ভুল সিদ্ধান্ত নেয় ৷
৫। তারা অমনোযোগী হয়ে পড়ে, কর্মসূচি বাস্তবায়নের কলাকৌশল সহজে বুঝতে পারে না।
৬। কাজের একাগ্রতা কমে যায় এবং তারা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।
কাজ-১ : অবসাদ কী এবং কী কারণে অবসাদের সৃষ্টি হয় তা শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে বোর্ডে লেখ এবং আলোচনা কর। কাজ-২ : মানসিক অবসাদগ্রস্ত হলে মনের উপর যে সব প্রভাব পড়ে তার একটি তালিকা তৈরি করে শ্রেণিকক্ষে দলে বিভক্ত হয়ে আলোচনা কর। |